মহেশখালী দ্বীপ (moheshkhali island)

মহেশখালী দ্বীপ


মহেশখালী দ্বীপ কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা। কক্সবাজার থেকে মহেশখালী হাতের কাছে আরশি নগরের মতো দূরে অবস্থিত। ১৫৫৯ সালে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপটি সৃষ্টি হয়।২০০ বছর আগে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর থেকে এই জায়গার নামকরণ হয়।যেটি এখন মহেশখালী দ্বীপ নামে পরিচিত।মহেশখালী উপজেলাতে মোট তিনটি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। যেমনঃ (১) সোনাদিয়া (২) মাতারবাড়ী (৩) ধলঘাটা। 

মহেশখালী দ্বীপ কিসের জন্য বিখ্যাতঃ

শুটকি, পান, মাছ, চিংড়ি, লবন এবং মুক্তার উৎপাদনে সমগ্র বাংলাদেশে এই উপজেলার সুনাম রয়েছে। কক্সবাজার থেকে ৪-৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করে ঘুরে আসতে পারবেন মহেশখালী দ্বীপ থেকে।এখানকার আগুন পান পর্যটকদের রোমাঞ্চিত করে থাকে।

মহেশখালী এর আয়তন কত?

এই দ্বীপের আয়তন হচ্ছে ৩৮৮.১৮ বর্গ কিলোমিটার।

মহেশখালী এর জনসংখ্যা কত?

আমাদের কাছে ২০১১ সালের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান আছে।সেই অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ছিলো ৩,২১,২১৮ জন।যার মধ্যে পুরুষ আছে এক লক্ষ্য সত্তর হাজার প্রায় আর মহিলা সংখ্যা ছিলো এক লক্ষ্য পঞ্চাশ হাজারের বেশী। % অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যার রেশিও হচ্ছে।

ক) মুসলিম ৯০.০৮%

খ) হিন্দু ৭.৮%

গ) বৌদ্ধ ১.৩%

ঘ) অন্যান্য ০৮২%

কক্সবাজার থেকে মহেশখালী এর দুরত্ব কত?

মহেশখালী দ্বীপে যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে নদী পথে যাওয়া। বড় বড় বোর্ড থাকলেও দ্রুত ও নিরাপদে যাওয়া যায় স্প্রীড বোর্ডে। আর এই পথে যাবার দুরত্ব ২০ কিলোমিটারে চেয়ে কম।

মহেশখালী এর দর্শনীয় স্থান কি কি?

ক) আদিনাথ মন্দির                                

(খ) বৌদ্ধ মন্দির

(গ) আদিনাথ ও গোরকঘাটা জেটি                

(ঘ) লবণ মাঠ

(ঙ) শুটকী মহাল                                    

(চ) গোরকঘাটা জমিদারবাড়ী

(ছ) উপজেলা পরিষদ দীঘি                        

(জ) সোনাদিয়া

(ঝ) হাসের চর                                       

(ঞ) চরপাড়া সী-বিচ

(ট) মৈনাক পাহাড়      

(ঠ) প্যারাবন              

(ড) চিংড়ী ঘের


মহেশখালী দ্বীপে কি দেখবেনঃ

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ। এই দ্বীপের উপরে রয়েছে আদিনাথ মন্দির। এই মহেশখালী দ্বীপের কারুকার্য এখানে আসা দশর্নাথীদের আকৃষ্ট করে। এই দ্বীপে বছরের ফাল্গুন মাসে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।এখানে রয়েছে অনেকগুলো বোদ্ধ বিহার,নানান প্রজাতির পশুপাখি এবং জলাবন।  

মহেশখালী দ্বীপে রয়েছে আদিনাথ মন্দির,স্বর্ণ মন্দির ও রাখাইন পাড়া। আপনারা চায়লে চরপাড়া বীচ ও ঝাউবাগান থেকে ঘুড়ে আসতে পারবেন।  রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখতে পারবেন লবনের মাঠ ও পান গাছের বাগান। 

মহেশখালী পানের সুনাম সারা বাংলাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে।  আপনারা মহেশখালী ঘুরতে গেলে অবশ্যই পান খেয়ে আসবেন। তবে যেন তেন পান হলে চলবে না একদম আগুন পান খেতে হবে।


আগুন পান খাবার ভিডিও

কক্সবাজার থেকে মহেশখালী দ্বীপে এ যাবার উপায়ঃ

মহেশখালী যাবার দুইটা পথ রয়েছে। আপনাকে প্রথমে কক্সবাজার আসতে হবে এবং এই পথটি কক্সবাজারগামীদের জন্য অনেক সুবিধাজনক৷ ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসার জন্য সড়কপথ, রেল এবং আকাশ পথে যাওয়া যায়। 

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবার বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে - গ্রিন লাইন,হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন,এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, সেন্ট হুদাই  ইত্যাদি পেয়ে যাবেন। শ্রেণীভেদ বাসগুলোর প্রতি সিটের ভাড়া ১০০০ থেকে ২৬০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। 

বাংলাদেশ বিমান ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, নভো এয়ার ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবার ভাড়া ৫০০০ থেকে ১৪,০০০ হাজার টাকা পযর্ন্ত হয়ে থাকে। 

কক্সবাজার শহর থেকে যেকোনো জায়গা থেকে মহেশখালী দ্বীপ যাবার জেটিতে ( ৬ নং ঘাট)  চলে যাবেন। তারপর আপনারা ওখান থেকে ট্রলার বা স্পীডবোর্টে ৮০ - ১০০ টাকার মধ্যে মহেশখালী যেতে পারবেন। 

আপনারা চায়লে স্পীডবোর্ট রিজার্ভ ও করতে পারবেন। মহেশখালীতে এক বা দুইজন ঘুরতে আসলে একটা রিক্সা ভাড়া করতে পারেন (১৮০-২০০) টাকার মধ্যে। 

আর ৫-৭ জন হলে অটো/ ইজিবাইক ভাড়া (৪০০-৫০০) টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। তবে ভালো করে দরদাম করে নিবেন যাতে পরে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় আপনাদেরকে। 

আবার অন্য পথ দিয়ে যেতে হলে আপনাকে চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে চকরিয়া এসে বদরখালী হয়ে মহেশখালী আসতে হবে। এই পথ দিয়ে মহেশখালী আসতে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। চকরিয়া হয়ে যাবার পথে "মহেশখালী জেটি" চোঁখে পরবে। 

আরো পড়ুনঃ হোটেল কক্স টুডে - বেস্ট হোটেল ইন কক্সবাজার (hotel the cox today)

মহেশখালী দ্বীপে গিয়ে কোথায় থাকবেনঃ

সোনাদিয়াতে তাবুতে রাত কাটানোর জন্য কিছু উদ্যমী ছেলে ব্যবস্থা করেছিলে।প্রসাশনের বাধার কারনে তারা সেই উদ্যোগ এ সফলতা পাই না। তাদের ইনভেস্ট জলাঞ্জলি যায়। তবে এই ব্যবস্থা সফল হলে পর্যটকদের জন্য আডভেঞ্চারের ব্যবস্থা হত। 

অল্প দূরত্ব হবার কারণে খুব সহজেই মহেশখালী থেকে ফিরে আসা যায়। তদুপরি এখানে রাত কাটানোর মতো তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই, তাই রাত্রি যাপনের জন্য পর্যটকরা কক্সবাজারে ফিরে আসে।

অফ সিজনে হোটেল বুকিং না দিলেও হোটেল রুম পাওয়া যাবার নিশ্চয়তা থাকে কিন্তু সিজনে যেমন ডিসেম্বর হতে জানুয়ারি মাসে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। কারণ এই সিজনে হোটেল রুম পাওয়া যায় না এ সময় পর্যটকদের অনেক ভিড় হয়ে থাকে। 

সাধারণত কক্সবাজারের দাম অনুসারে হোটেল/ মোটেল/ রিসোর্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। 

(১) সায়মন বিচ রিসোর্ট, লং বীচ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, কক্স টুডে, ওশেন প্যারাডাইজ, হেরিটেজ ইত্যাদি আপনারা ৬,৫০০ থেকে ১০,৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

(২) কোরাল রীফ নিটোল রিসোর্ট, সী প্যালেস, বীচ ভিউ, সী গাল, ইউনি রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, সী ক্রাউন ইত্যাদি আপনারা ৩,৫০০ থেকে ৬,৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। 

(৩) ইকরা বীচ রিসোর্ট, কল্লোল,নীলিমা রিসোর্ট, অভিসার, হানিমুন রিসোর্ট, মিডিয়া ইন ইত্যাদি আপনারা ৯০০ থেকে ৩,৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। 

তবে উপরে উল্লেখিত মূল্যের চেয়ে আরো কম দামে হোটেল ভাড়া পাওয়া যেতে পারে। অফ সিজনে হোটেল ভাড়া অর্ধেক হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনারা আগে কক্সবাজারে নেমে একটু খোঁজখবর নিতে পারেন। 

তবে রিক্সাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালার কাছে থেকে কোন পরামর্শ নিবেন না। প্রয়োজন পরলে হোটেলের ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। 

মহেশখালী


মহেশখালী দ্বীপে কোথায় খাবেনঃ

মহেশখালী থেকে কক্সবাজার তেমন বেশি দূরত্ব না।এই দ্বীপ থেকে কক্সবাজারে খুব সহজে এবং কম সময় ফিরে আসা সম্ভব। তাই আপনারা সাময়িক ক্ষুদ্রা নিবারণের জন্য মহাখালী দ্বীপে হালকা কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন। আবার আপনারা ইচ্ছা করলে কক্সবাজারে ফিরে এসে খেতে পারেন।

কক্সবাজারে সব ধরনের এবং মানের রেস্টুরেন্ট আছে। এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে কক্সবাজারের বিখ্যাত খাবার খেতে পারেন।

কক্সবাজারে মধ্যম মানের রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে - ধানসিঁড়ি, পৌষি, রোদেলা, নিরিবিলি ইত্যাদি। সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছু মতো খাবার এর দামও কম/বেশি হতে পারে। যেমন - 

ভাতঃ ২৫-৪৫ টাকা,কোরাল/ভেটকিঃ ১৬০ টাকা (প্রতি পিচ), রুপচাঁদা ফ্রাই/রান্নাঃ ৩৫০-৪৫০ টাকা (বড় ২ জন খাওয়ার মতো), মিক্সড ভর্তাঃ ৮০/১৬০/৪০০ টাকা (৮-১০ আইটেম), গরুঃ ১৬০-২২০ টাকা (২ জন খেতে পারবেন), লইট্যা ফ্রাইঃ ১১০-১৩০ টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা), ডালঃ ৩০-৬০ টাকা।

এছাড়াও লাবনী পয়েন্টে হান্ডি রেস্তোরাঁ থেকে ২৫০-৩০০ টাকার হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানী পেয়ে যাবেন। আর কেএফসি তো আছেই।

সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আওয়ার কক্সবাজারে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। 

এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে Our Coxsbazar টিম দায়ী থাকবে না। 

Post a Comment

0 Comments

হোটেল সী ওয়ার্ল্ড কক্সবাজার (Hotel Sea World Cox'sbazar)