নাজিরারটেক, কক্সবাজার (Najirartek)

নাজিরারটেক এর জনপ্রিয় সামুদ্রিক অর্গানিক শুটকি মাছের সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে।

শুধু দেশে নয় একইভাবে সুনাম অর্জন করেছে সারা দুনিয়া জুড়ে।

কিন্তু শুটকি মাছ উৎপাদনে রাসায়নিকের ব্যবহার মানবদেহের পক্ষে ক্ষতির কারন হয়ে উঠছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই লেখা।

কক্সবাজারে (cox’sbazar) শুঁটকি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় এলাকা হচ্ছে নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লী।

কক্সবাজার শহর থেকে পশ্চিম দিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাগর তীর ঘেঁষে এই নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লী।

এটি একটি ভেসে উঠা নতুন চরএলাকা। সারা বছর জুড়ে এখানে চলে শুঁটকি মাছের উৎপাদন।

অনেক বড়  এলাকাজুড়ে নাজিরারটেক এলাকার অবস্থান শত শত বাঁশের মাচায় নানান ধরনের মাছ শুকানো হয়।

অনেকটা ব্যস্ত থাকে সারা বছর এই এলাকা।

শুঁটকি পল্লী নাজিরারটেক এ রয়ছে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে আলাদা আবেদন।

কক্সবাজারের (cox’sbazar) নাজিরারটেক বাংলাদেশের বৃহৎ শুটকি পল্লী। বাংলাদেশের গর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত সামুদ্রিক মাছ প্রাকৃতিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই নাজিরারটেক শুধু মাত্র মৎস অবতরন কেন্দ্র নয়,ভ্রমন প্রিয় মানুষের কাছের শান্তু নিরিবিলি সাগর সৈকত ও বটে।

এই নাজিরারটেক বীচে দারিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায় অপরুপ সুন্দর সোনাদিয়া এবং মহেশখালী দ্বীপ।

বিশাল সমুদ্র উপকূলে বিশাল জায়গা নিয়ে এই রকম একটা শুঁটকিপল্লী হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি শুঁটকি তৈরির এই মহাযজ্ঞ দেখলে ভ্রমন তালিকায় যুক্ত হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা।

দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই শুঁটকি কিভাবে তৈরী করা হয়।

মাছকে শুটকির জন্য প্রস্তুত করার প্রধান ধাপ হলো মাছ বাছাই করণ।

ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ও আকারের মাছ গুলোকে প্রথমে বাছাই করে আলাদা করতে হয়।

আলাদা করা মাছগুলো কে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করে নেয়া হয়।

এই মাছগুলো মধ্যে কিছু মাছকে নিয়ে যাওয়া হয় সরাসরি মাছের মাচায় আবার কিছু মাছকে নিয়ে যাওয়া হয় লবন দেওয়ার জন্য।

লবন দেয়া মাছকে লবন সহ রেখে দিতে হয় এক থেকে ছয় ঘন্টা।

মাছের আকার আকৃতি এর উপর নির্ভর করে মাছকে ভিন্ন ভিন্ন মাচায় শুকাতে দেয়া হয়।

ছোট আকৃতির পুটি, মলা মাছ, চিংড়ি এবং ফাইস্যা মাছকে শুকাতে দেয়া হয় মাটিতে বিছানো পাটিতে।

আবার লইট্যা বা ছুড়ি মাছ এর মত বড় মাছকে বাশেঁর মাচায় ঝুলিয়ে শুকানো হয়।

প্রাকৃতিক ভাবে রোদে শুকিয়ে মাছকে শুটকি তৈরি করতে সময় লাগে দুই থেকে পাঁচ দিনের মত।

তবে এই সময়টা অনেক নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া এবং মাছের ছোট বড় আকৃতির উপর।

ছোট মাছকে দুই থেকে তিন দিনেই শুটকি বানানো যায় আবার মাছের আকার বড় হলে সময় একটু বেশী লাগে।

সাধারনত চার কেজী কাঁচা মাছ শুকিয়ে এক কেজী শুটকি পাওয়া যায়।সেই হিসেবেই দাম নির্ধারিত হয়।

নাজিরারটেক – www.ourcoxsbazar.com


সারা বছর ধরে এখানে বিভিন্ন প্রকার মাছ শুটকি করা হয়।

এখানে শুঁকানো মাছের মধ্যে প্রধান মাছ হল লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রুপচাঁদা, চিংড়ি, কোড়াল, বাশপাতি, মলা, চাপিলা, পুটি প্রভৃতি।

চাহিদা এবং মাছের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে এই নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে ​লইট্যা এবং ছুড়ি মাছের শুটকি সবচেয়ে বেশী তৈরি হয়।

কক্সবাজারের (cox’sbazar) এই নাজিরারটেক এসে আপনি যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন শুধু শুটকি মাছ আর মাছ।

এখানে মাচার পর মাচা বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি তৈরি হয়ে থাকে।

এই শুটকি তৈরিতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করে চলে সমান তালে।

পুরুষ শ্রমিকরা সাধারনত মাছ ধরা পরিবহন করা কেনা ও বেচার কাজটি করে থাকেন।

আর এই শুটকি তৈরির প্রক্রিয়া প্রান বলা যায় নারী শ্রমিকদের। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান নারী শ্রমিকরা।

শুটকি তৈরি হলে এখানে আটি বাধা হয় বিক্রি করার জন্য।

অনেক সময় পাইকাররা এই শুটকি পল্লী থেকেই শুটকি নিয়ে যান আবার অনেক সময় আড়তে নিতে হয় এগুলো বিক্রি করার জন্য।

নাজিরারটেকের কাছেই রয়েছে সমিতিপাড়া বাজার, শুটকি আড়ৎ। 

কক্সবাজারের অলিগলি রাস্তার পাশেও সাশ্রয়ীমুল্যে এই মাছ বিক্রয় হতে দেখা যায়। তবে ইদানিং এগুলো বিক্রিতে এসেছে আধুনিকতা।

কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেট, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী বিচ মার্কেট, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায় বড় বড় শুঁটকির দোকান।

বড় বড় শপিং মল ও সৈকতে গড়ে ওঠা বিপনি বিতান থেকে বেড়াতে যাওয়া ট্যুরিস্টরা মাছগুলো কেনে থাকে।

যদিও কক্সবাজার ভ্রমণে সমুদ্রে দেখা এবং নীলজলে সারাদিন দাপাদাপি করা সবার আসল কারণ।

তবুও সময় করে একটু কষ্ট হলেও নাজিরারটেল শুঁটকি পল্লী দেখে আসা উচিত।

দেশের মধ্যে কি এক মহাযজ্ঞ হচ্ছে তা নিজ চোখে দেখে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করা উচিত।

অর্গানিক প্রক্রিয়া্য শুঁটকি উৎপাদন দেখে আপনার শুঁটকি খাবার আগ্রহ বেঁড়ে যেতে পারে।

এই নাজিরারটেক এর শুটকি সারা বাংলাদেশে সমাদৃত এবং রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।

Post a Comment

0 Comments

হোটেল সী ওয়ার্ল্ড কক্সবাজার (Hotel Sea World Cox'sbazar)