শাহপরী দ্বীপ - অপরুপ সৌন্দর্যের ছানি (Shapuree Island)

 



শাহপরী দ্বীপ (Shapuree Island) - বাংলাদেশের দক্ষিনের ছোট্র দ্বীপ।

দ্বীপের বর্ণনাঃ বাংলাদেশের এক অদ্ভুত ও কল্পনাময় দ্বীপের নাম শাহপরীর দ্বীপ (Shapuree Island)। এর একপাশে রয়েছে নাফ নদী, মায়ানমারের সারি সারি পাহাড় আর একপাশে বাংলাদেশের এক্বমাত্র সাগর।

তাই দ্বীপের একপাশে রয়েছে নদীর কর্দমাক্ত বালুচর আর অপর পাশে নীল পানি এসে মিশেছে স্বচ্ছ সাদা সাগর বীচে। 

দ্বীপের মাঝ বরাবর দাঁড়ালে এক পাশে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর সমুদ্রের পানিতে আকাশের মিতালী দেখা যায়। 

আর অপর পাশে দেখা যায় নাফ নদীর পরেই বার্মিজ পাহাড়ের সারি।

নাফ নদীর মোহনায় বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। প্রথম ইংরেজ-বর্মী যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা এই দ্বীপের দাবি করে।

শাহ পরী টেকনাফের সর্ব দক্ষিণে ভূ-ভাগের খুবই নিকটবর্তী একটি দ্বীপ, এবং টেকনাফ উপজেলার অর্ন্তগত।

নদীর ঐ পাড়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশকে উৎখ্যাত করা নিপিড়ক রাষ্ট্র বার্মা বা মায়ানমার সীমান্ত।

কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপ।এটি মূলত সাবরাং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। 

একসময় এটি দ্বীপ থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছুকাল আগে এটি মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।

টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে শাহপরীর দ্বীপ এর দূরত্ব মনে হতে পারে অনেক কিন্তু তানা মাত্র পনেরো কিলোমিটার।

অপরিচিত এই দ্বীপের নামকরনের ইতিহাস 

এর নামকরণ সম্পর্কে কেউ বলেন সম্রাট শাহ সুজার ‘শাহ’ আর তার স্ত্রী পরীবানুর ‘পরী’ মিলিয়ে নামকরণ হয়েছিল এই দ্বীপের। 

কারও মতে ‘শাহ ফরিদ’ আউলিয়ার নামে দ্বীপের নাম করণ হয়েছে। 

অপর দিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি সা’বারিদ খাঁ’র ‘হানিফা ও কয়রাপরী’ কাব্য গ্রন্থের অন্যতম চরিত্র ‘শাহপরী’। 

রোখাম রাজ্যের রাণী কয়রাপরীর মেয়ে শাহপরীর নামেই দ্বীপের নামকরণ হয়েছে বলেও অনেকে বলেন। (নামকরণের তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া)

শাহপরী দ্বীপে যাবার অবহেলিত রাস্তা - www.ourcoxsbazar.com

যাতায়াত ব্যবস্থাঃ

শাহপরীর দ্বীপে যাওয়াটা আসলে ভ্রমনকারীদের জন্য কিছুটা কষ্টকর। টেকনাফ মূল ভূখণ্ডের সাথে সবেধননীল মনি একটি কাঁচা সড়ক দিয়ে যুক্ত। 

শীতের দিনে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য অটোরিক্সা পাওয়া যাবে। অটোরিক্সা শাহপরীর দ্বীপের ফেরীঘাটের সামনে নামিয়ে দেবে। 

আর বর্ষাকালে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই সময়ের নৌকা বা ট্রলারে যেতে হবে।কারন সামান্য একটু পানি জমলেই কাঁদায় চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যায়।

আয়তন ও জনসংখ্যাঃ

স্বাধীনতার আগে শাহপরীর দ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। 

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।বর্তমানে এই দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।

আশাবাদী কথাঃ

টেকনাফ জেটি থেকে শিপে চড়ে সব পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ এ চলে যায় বলে অনেকটাই অবহেলিত পড়ে থাকে অদ্ভুত সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। 

তবে এবার হয়তো সময় বদলাতে চলেছে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের শেষ মাথাটা চলে আসছে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত৷ 

শাহপরীর দ্বীপের একমাত্র জেটি - www.ourcoxsbazar.com

মেরিন ড্রাইভের সবচেয়ে সুন্দর অংশটুকুই হয়তো দেখা যাবে কাজ শেষের পর৷ 

এতে যেমন দ্বীপের মানুষদের জীবনযাত্রার মান পাল্টাবে, তেমনি হয়তো অত্যধিক নিম্ম আয়ের মানুষের চাপে অবহেলিত এই বাজারেও আধুনিকতার বাতাস পেতে পারে। 

কি কি দেখবেন এই দ্বীপেঃ

  • রয়েছে দ্বীপের তিন দিকে তিনটি বেলাভুমি।
  • মায়ায়মারের পাহাড় শুধু নয় বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মাতৃভুমির জয়প্রিয় শহর মন্ডু।
  • সামনে থেকে দেখা যায় পুরো সেন্টমার্টিনের ভিউ।
  • দেকতে পারেন বি ডি আর ওয়াচ টাওয়ার।
  • দেখতে পাবেন দিগন্ত জোড়া লবনের প্রান্তর
  • মাছ ধরা ছেলেদের জীবন চিত্র।

কি কি করবেন এই দ্বীপেঃ

  • ট্রলারে করে চলে যেতে পারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে।
  • রাতে তাবুতে রাত্রিযাপন করতে পারে।
  • নিঃশব্দে চাঁদের আলোয় দেখতে পারেন।
  • জেটি থেকে ফিরে আসার সময় ছোট্র বাজারে খেতে পারেন পুয়া পিঠা।
  • স্বাদ গ্রহন করতে পারে এখান কার পিঁয়াজু যা ভোলার নয়।

সাবধানতাঃ

  • শাহপরীর দ্বীপ এর তিনটি সৈকতেই নেই কোন রকম লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা। তাই জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোন চিহ্নও থাকে না এ সৈকতগুলোতে।
  • তাই সমুদ্র স্নানে নামলে আগে থেকেই নিজ দায়িত্বে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন।
  • কোনো অবস্থাতেই ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না।
  • অপচনশীল দ্রব্যাদি ফেলে জায়গাটা নোংরা করবেন না।
  • পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

থাকতে পারেন টেকনাফের পর্যটন মোটেল নে টং এ।ফেরার পথে টেকনাফ - কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডে উঠলে ফিরে পাবেন নাগরিক সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোয়া। তবে মনে থেকে যাবে দ্বীপের নিস্বব্ধতা। হাত ছানি দেবে বার বার যাবার জন্য।

Post a Comment

0 Comments

হোটেল সী ওয়ার্ল্ড কক্সবাজার (Hotel Sea World Cox'sbazar)