মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন- ঢাকা টু কলিকাতা জার্নি (maitree express)


মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা ও কলিকাতার মধ্যে চলাচল কারী প্রথম ট্রেন। আরো বড় পরিসরে বলতে গেলে বলা যায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল কারী প্রথম ট্রেন সেবা।

মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এর পর দার্জিলিং এ বাংলাদেশীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আরো একটি ট্রেন চলাচল করে।

যার নাম হলো মিতালী এক্সপ্রেস।এই ট্রেন বাংলাদেশের কান্টমেন্ট ষ্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে।

আর ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নিউ জলপাইগুড়িতে গিয়ে থামেন।

হাতের নাগালে আমাদের কলিকাতা

পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে গেছে। আমাদের দেশের চারপাশে ভারত দ্বারা বেস্টিত হওয়ার কারনে প্রায়ই আমাদের ভারতে গমন করতে হয়।

কলিকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের দেশে ভাষা ও কৃষ্টি কালচারের মিল আছে। সেই কারনের অনেক বাংলাদেশী বেড়াতে, চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য প্রায় কলিকাতা ভ্রমন করে থাকে।

তাছাড়া বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমনের চেয়ে কম খরচে কলিকাতা ভ্রমন করা যায়।

আর এই ভ্রমন করতে বাংলাদেশীরা বাস, বিমান ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্যবহার করে থাকে।

আজকে আমি আপনাদের এই ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে পশ্চিম বঙ্গে পৌঁছানো পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচলা করবো।

বাংলাদেশীদের অনেকে এই এক্সপ্রেস ট্রেনে ভারতে যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকে।

চারশত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারেন খুব অল্প সময়ে।সীমান্ত পার হয়ে ওপারে গন্তব্যে যেতে সময় লাগবে মাত্র আট ঘন্টা। করোনা মহামারির সময় প্রায় দুই বছর এই ট্রেন বন্ধ ছিলো।

এখন করোনা কালিন সর্তকতা উঠে যাবার কারনে একাধিক দিন এই ট্রেন ঢাকা – কলিকাতার মাঝে নিয়মিত যাতায়াত করছে।

যাত্রার স্টেশনছাড়ার সময়গন্তব্য স্টেশনপৌছায়
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
সকাল ৮ঃ১৫ মিনিট
(বাংলাদেশ সময়)
কলকাতাবিকেল ৪ টা
(ইন্ডিয়ান সময়)
কলকাতাসকাল ৭ঃ১০ মিনিট
(ইন্ডিয়ান সময়)
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টবিকাল ৪ঃ০৫
(বাংলাদেশ সময়)

এই ট্রেনের টিকেট কাটতে হবে একমাত্র কমলাপুর ষ্টেশন থেকে।আমি যাত্রার চারদিন আগে টিকিট কেটেছিলাম।যাত্রীর চাপ বেশে থাকায় বেশ কিছুদিন আগে টিকিট কাটা উত্তম।

ঢাকা কমলাপুর ষ্টেশন থেকে একমাত্র এই ট্রেনে টিকেট পাওয়া যায়। অনলাইন অথবা অন্য কোন ষ্টেশন থেকে এই টিকেট বিক্রি হয় না।

প্রতিদিন সকাল আট টা থেকে বিকাল পাঁচ টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করে থাকেন। পাসপোর্টে আপনার ভারতে টুরিষ্ট অথবা মেডিকেল ভিসার ষ্টিকার লাগানো অবস্থায় নিবেন।

সাধারণতঃ ভারত দুতাবাস ভিসা দেবার সময় তিনটি রুটের অনুমতি দিয়ে থাকে। বেনাপোল রুট থাকে উন্মুক্ত। বাকি গুলো নিজের উল্লেখ্য করে দিতে হয়।

এই মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এ ভারত যেত হলে দর্শনা – গেদে রুট উল্লেখ করে দিতে হবে।

অন্যথায় ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে না। এই ট্রেনের ভাড়ার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

আমরা যেহেতু তিনজন যাচ্ছিলাম তাই একটা কেবিন নিলাম। আমাদের চেষ্টাছিলো এসি চেয়ার নেবার।

কিন্তু না পাওয়ায় কেবিন নিতে হলো। আমাদের খরচ পড়েছে প্রতিজনের ৩৬০০টাকা।যদি এসি চেয়ার পেতাম তবে ভাড়া হাজার খানেক টাকা কম পড়তো। অবশ্য প্রতিজনের ক্ষেত্রে।

টিকেটের ধরণটিকেটের মুল্যভ্যাটট্যাভেল ট্যাক্সসর্বমোট
এসি কেবিন২৫২২৩৭৮৫০০৩৪০০
এসি চেয়ার১৭৪৮৩৬৩৫০০২৫০০
তবে উল্লেখ্য যে যে কোন সময় টিকিটের মুল্য পরিবর্তন হতে পারে।

অনেকে ট্যাভেল ট্রাক্স পরিশোধ করা নিয়ে জঠিলতায় পড়েন। তবে ট্রেনে গেলে এই ঝামেলা সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এখানে প্রতিটি টিকেটের সাথে ট্যাভেল ট্রাক্স নিয়ে নেওয়া হয়।

টিকিট কাটতে যদিও কমলাপুর ষ্টেশনে যেতে হয়।কিন্তু গাড়ী ছাড়েন ক্যান্টমেন্ট ষ্টেশন থেকে। ক্যান্টমেন্ট ষ্টেশন এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় কিনা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।

ট্রেনের যাত্রার শিডিউল নিম্মে দেওয়া হলোঃ

সকাল আট টা পনেরো মিনিটে ট্রেনছাড়া কথা থাকলেও আমাদের মোটামুটি এক দেড় ঘন্টা আগেই পৌঁছাতে হবে।অনেকটা বিমান বন্দরে যেভাবে চেকইন করতে হয় এখানেও তাই। প্রথমে ওয়েটিং রুমে বসে বহিঃগমন কার্ড পুরুন করতে হবে। সাথে রাখতে হবে আনুষজ্ঞিক কাগজ পত্র।

কোভিট ১৯ এর কারনে কোভিটের সনদপত্র লাগবে।

তবে মনে আপনি যখন ভ্রমন করবে তখনকার নিয়ম জেনে নিবেন। আপনি যদি প্রাপ্ত বষ্কয় হন তবে ৩০ কেজি পর্যন্ত মালামাল সাথে নিতে পারবেন। যদি ৩০ কেজির বেশি হয় তবে? চিন্তার কোন কারন নেই। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে বাড়তি কিছু জরিমানা।

এই ট্রেনে উঠলে আপনি ট্রেনের এক অন্যরকম ভার্শন দেখতে পাবেন।আমরা সচার আচার যে সকল ট্রেন ভ্রমন করি তার চেয়ে এই ট্রেন অনেক ভিন্ন। সম্পুর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। পরিস্কার ঝক ঝকে।

নেই কোন হকারে উৎপাত।এই ট্রেনে আছে আট টি কোচ। যার চারটিতে কেবিন। আর অন্য চারটিতে আছে এসি চেয়ার।

কেবিনে যথেষ্ট জায়গা আছে। উপরে আছে লাগেজ রাখার ব্যবস্থা।

লাগেজ না রাখলে সেখানে একজন ঘুমিয়েও যেতে পারেন।মাঝে মাঝে ট্রেনের কর্মচারীরা এয়ার ফ্রেশনার দিয়ে যাচ্ছে।ভাবা যায় ব্যপারটা।

লাইটের সুইচ সবগুলো কাজ করছে।আছে মোবাইল চার্জিং ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে রেলওয়ের কর্মচারীরা খাবার বিক্রি করতে আসছে।

নাস্তাতে আছে ফিশ কাকলেট, আছে চিকেন ফ্রাই, ব্রেড ও সস।

girl, street, dhaka-2875660.jpg
Bangladeshi general train

এই প্যাকেজটির মুল্য মাত্র ১৪০টাকা।চাইলে খেতে পারেন চা কফিও।

কফির মুল্য মাত্র ৩০ টাকা। মোট কথা চা নাস্তা করার ব্যবস্থা আছে।

কেউ যদি দুপুরের লাঞ্চ খেতে চায় তবে অগ্রিম অর্ডার করতে হবে।সেই খাবার ট্রেন উঠবে দর্শনা থেকে।

দর্শনাতে পৌঁছানোর পর বাংলাদেশের রেলওয়ের পুলিশ নেমে যায়। কিছুক্ষণ ট্রেন চলবে নিরাপত্তা সদস্য বিহিন।

উপারে গেলে ভারতীয় পুলিশ সদস্য কলিকাতা পর্যন্ত ট্রেনে নিরাপত্তা দ্বায়িত্ব পালন করবে।

ট্রেনে দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে। সেট মেনু।

১।ভাত, মাছ ও ডাল ২। ভাত, মুরগীর মাংশ ও ডাল ৩।মুরগীর মাংশ, বিরিয়ানি।

প্রতি সেট মেনুর দাম ১৭০টাকা মাত্র।মানটা ভালো।দুপুরে ক্ষুদ্রার পেটে আপনা্র কাছে অনেক তৃপ্তিদায়ক হবে।

ধীরে ধীরে গাড়ী দর্শনা গেদে পাড় হয়ে বিকেল চারটা নাগাদ আপনাকে কলিকাতা পৌঁছে দিবেন।

গাড়ীতেই পেয়ে যাবেন ভারতে প্রবেশ কার্ড যা গাড়িতে পুরুন করতে হবে।গাড়ীতে টয়লেট ছিলো পরিস্কার।

বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ভারতীয় সময় সাড়ে চারটার দিকে ভারতের কলিকাতার স্টেশনে পৌছে যায়।

সেখান থেকে ট্রাক্সি নিয়ে আপনার পছন্দের নিবাসে পৌছে যেতে পারেন।

এভাবে বাংলাদেশ থেকে সহজেই সীমান্ত চেকিং এর ঝামেলা ছাড়াই ভারতে পৌঁছে যেতে পারবেন।

তবে সমস্যা হলো বাংলাদেশ ও ভারতের দুই স্টেশনেই কাগজ পত্র চেকিং ও শুল্ক বিভাগের কাজ করতে অনেকটা সময় লেগে যায়।

সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ Our Coxsbazar টিম দায়ী থাকবে না।

Post a Comment

0 Comments

হোটেল সী ওয়ার্ল্ড কক্সবাজার (Hotel Sea World Cox'sbazar)